শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন

আপডেট
শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৭তম জামাতে মুসল্লিদের ঢল

শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৭তম জামাতে মুসল্লিদের ঢল

শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৭তম জামাতে মুসল্লিদের ঢল

নিজস্ব সংবাদদাতা:
উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৭তম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ঈদ জামাতে মুসল্লিদের ঢল নামে। সোমবার (১৭ জুন) সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় এ জামাত। শোলাকিয়ার ঈদগাহ মাঠের নির্ধারিত ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ না আসায় জামাতে ইমামতি করেন জেলা মারকাজ মসজিদের খতিব মাওলানা হিফজুর রহমান খান। এদিকে দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের ঈদগাহ মাঠে আসার সুবিধার্থে ঈদের দিন সকালে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুইটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা রাখে জেলা প্রশাসন।

ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে মাওলানা মো. হিফজুর রহমান খান ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানবিক নির্যাতন থেকে মুক্তি ও বাংলাদেশকে রক্ষায় মহান আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করেন। সেই সঙ্গে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি-কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। ঈদ জামাতে উপস্থিত ছিলেন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনরা।

এদিকে ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে আগে থেকেই নেওয়া হয় চার স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহর এবং আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয় গোয়েন্দা নজরদারি। বিজিবি, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১ হাজার ২০০ সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। চারটি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন ও সিসি ক্যামেরা ছাড়াও ড্রোন ঈদগাহের ভেতর ও বাইরের এলাকায় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত ছিল।

 

 

 

এর আগে সকাল থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকেন ঈদগাহের দিকে। বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়, তাই এখানে প্রতি বছর ঈদের জামাতে অংশ নেয় অনেক মুসল্লি। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ঈদুল আজহায় যাতায়াতকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির পাশাপাশি সাদা পোশাকে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিরাপত্তার স্বার্থে মাঠে ওয়াচ টাওয়ার, ড্রোন ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, মাইনোকোলার, সিসি ক্যামেরাসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। এ ছাড়া দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ছিল।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৯৭তম ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সব ব্যবস্থায় নেওয়া হয়েছিল। দূরের মুসল্লিদের জন্য ঈদের দিন সকালে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করছে দুটি বিশেষ ট্রেন। ঈদগাহ ময়দানে মুসল্লিদের প্রবেশের জন্য মোট ২৩টি ফটকের মধ্যে ৫টি ফটকের প্রবেশপথ উন্মুক্ত রাখা হয়। এসব প্রবেশপথ দিয়ে মুসল্লিরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে ঈদগাহে প্রবেশ করেন। এর আগে তিন দফা মেটাল ডিটেক্টরে সবার দেহ তল্লাশি করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধু জায়নামাজ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সমাগম। জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে প্রায় সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’ যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |